বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেক: দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। নারীর শিক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সামাজিক – অর্থনৈতিক, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান ও দেশের উন্নয়নে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা অন্যতম। দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম খাত হলো পোশাক শিল্প। আর এই শিল্পের কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৭০% নারী শ্রমিক রয়েছে। বর্তমানে দেশের সকল কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট অভিবাসী শ্রমিকের ৭৪.০৮ শতাংশ গিয়েছিলো সৌদি আরবে। ২০১১ সালে এই হার ছিলো উক্ত বছরের মোট প্রবাসী শ্রমিকের মাত্র ২.৬৪ ভাগ এবং উক্ত বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গমন করেছিলো শতকরা ৫০ ভাগ, যা ২০২১ সালে ৪.৭৩ ভাগে নেমে এসেছে। বিদেশ গমণকালীন প্রবাসী শ্রমিকের দক্ষতার স্তরে ২০১০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসেনি, মোট শ্রমিকের তিন- চতুর্থাংশই স্বল্প-দক্ষ শ্রমিক।
অভিবাসী শ্রমে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট শ্রম শক্তির ৬৩.৫ মিলিয়ন ; এর মধ্যে পুরুষ ৪৩.৫ মিলিয়ন (৫৮.২%). নারী ২০ মিলিয়ন (৩১.৫০%)। শ্রম শক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৫৮.২%। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তাদের সিংহভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে জানা যায় পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকদের কাজের গতিশীলতা বেশি এবং তারা খুব মনোযোগ সহ কারে কাজ করে থাকে। কিন্তু প্রত্যেক খাতে এই নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে শারীরিক মানসিক নির্যাতনেও স্বীকার হয়ে থাকে। দেশে এমন কিছু সেক্টর আছে যেখানে নারী পুরুষ সমান ভাবে কাজ করে থাকে নারীদের কে সমান মজুরী দেওয়া হয় না ; অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের কে শ্লীলতাহানি এবং বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। এমন দুরবস্থা প্রায় সকল খাতেই দেখা যায়। শুধু দেশের শিল্প কারখানায় যে নারীরা কাজ করেন তাই নয় ; বিদেশের মাটিতেও পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে এই নারীরা কাজ করে থাকেন। বলা যায় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে নারীদের কে আখ্যায়িত করা যায়। কোন অংশে বা কোন কাজে নারীরা পিছিয়ে নেই। পুরুষের মতোই কাজ করে থাকেন নারীরা। কিন্তু এই নারীরা যেমন দেশের মাটিতে বিভিন্ন নির্যাতনের স্বীকার হয় ঠিক তেমনি ভাবে দেশের চেয়ে বিদেশের মাটিতে আরও বেশি সহিংসতার স্বীকার হয়। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতা মেটানোর লক্ষ্যে মা বাবা, ভাই বোন, স্বামী সন্তান, পরিবার পরিজনের মায়া মমতা ত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান এই নারীরা। কিন্তু সেখানেও কষ্টের সীমা নেই তাদের। নারীদের কে ভালো বেতন এবং সহজিকরণ ডিউটি কিংবা হরেক রকমের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। সবচাইতে বেশি সৌদি আরবে নারী প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু সেই আরব দেশেই নারীরা বিভিন্ন যৌন হয়রানি এবং সহিংসতার স্বীকার হয়। দেখা যায় অধিকাংশ দালাল চক্র নারীদের কে প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশের মাটিতে ছেড়ে দেয় ; মনে হচ্ছে যেনো এক প্রকার বিক্রির মতো। সাইফুল ইসলাম নামক একজন সৌদি প্রবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী শ্রমিকরা সৌদিতে আসে তাদের কে বিভিন্ন ক্যাটাগড়িতে ভালো কাজের কথা বলে সৌদিতে নিয়ে আসে কিন্তু আসার পর সকলকেই গৃহকর্মী হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর এই কাজেই বেশি নারী গৃহকর্তাদের কাছে নির্যাতিত এবং ধর্ষিত হয়। আইনী সহায়তা বা সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থেকেও তারা বঞ্চিত। এক প্রকার খুব অসহায়ত্ত্বের মধ্যে দিনযাপন করে। অনেক সময় দেখা যায় তাদের নির্যাতনের স্বীকার হয়ে সহ্য করতে না পেরে দেশের মাটিতে চলে আসার জন্য বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে আবেদন করে থাকেন ; এমনকি পালিয়ে চলে আসার চেষ্টাও করে থাকেন। সবচেয়ে মারাত্মক এবং মর্মান্তিক ঘটনা হলো যে অনেক নারী ধর্ষিত হয়ে যখন দেশে আসে তখন তাদের পরিবার পরিজন এবং সমাজ তাদেরকে গ্রহণ করতে চায়না, পরে দেখা যায় এই নারীরা মানুষের বাজে মন্তব্য বা সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। এভাবেই অসংখ্য নারী শ্রমিকদের জীবন অকালে ঝরে যায়। এই সহিংসতা রোধ করার জন্য বিশেষ ভাবে সরকারের জোরালো ভূমিকা রাখা জরুরী।